তৃতীয় শ্রেণীর কুটির শিল্প
তৃতীয় শ্রেণীর (কাঠ ও কাঠের আসবাবপত্র) কুটির শিল্পগুলাের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল কাঠের তৈরি খেলনা, খাট, বেত ও বাঁশের দ্রব্যাদি, বাদ্যযন্ত্র তৈরি, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি তৈরি, গৃহসজ্জার সামগ্রী ইত্যাদি। পরবর্তী শ্রেণীভুক্ত বিভিন্ন রকম কুটির শিল্পের মধ্যে রয়েছে বর্জ্য কাগজের প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং এগুলাে থেকে নানা সামগ্রী তৈরি, বই বাঁধানাে, কাগজের ফুল তৈরি, কাগজভিত্তিক অন্যান্য হস্ত শিল্প , আয়ুর্বেদিক ঔষধ, সাবান কারখানা, মােমবাতি, প্রসাধনী, পলিথিন ব্যাগ, মাটি ও কাদামাটির সামগ্রী, চুনাপাথর ও শামুকের চুন শিল্প , আলাে জ্বালানাের . সজ্জা-সামগ্রী, কাঠ মিস্ত্রি ইত্যাদি। সর্বশেষ শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে হস্তশিল্পজাত নানাবিধ দ্রব্য ও অন্যান্য কুটির শিল্প।
কুটির শিল্পের শৈল্পিক গুরুত্ব
বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে কুটির শিল্পের শৈল্পিক গুরুত্ব বর্ণনাতীত। উন্নয়নশীল এদেশ নিজস্ব শক্তি নিয়ে এখনাে পুরােপুরি দাড়াতে পারেনি। পরাধীন পরিধির মধ্যে দেশের বৃহৎ শিল্পগুলাে গড়ে উঠেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সে সময়কার পূর্ব পাকিস্তানে। আজকের বাংলাদেশ তখন শিল্প উন্নয়নের কোন সুযােগ পায়নি। বর্তমান সময়েও যে তেমন কোনাে শিল্পবিকাশ হয়েছে এমনও নয়। এখনাে বিদেশ থেকে পণ্য দ্রব্য আমাদানি করে আমাদের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। এশিয়ার সিংহ বলে পরিচিত জাপান কুটিরশিল্প সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছে। আমরাও যদি কুটিরশিল্পকে যথাযথভাবে ছড়িয়ে দিয়ে তাকে ভােগ্যপণ্য তৈরির শিল্পে রূপান্তর করতে পারি, তবে বাংলাদেশও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে কুটিরশিল্প অত্যন্ত মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারে। কুটিরশিল্পের প্রসারে দেশে কর্মসংস্থানের পথও উন্মুক্ত হয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে বেকার সমস্যা বাড়ছে। কৃষিও নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতায় মার খাচ্ছে। সে প্রেক্ষিতে কুটিরশিল্পে অধিক শ্রমশক্তি নিয়ােগ করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিমান রাখতে সক্ষম। প্রয়ােজনে কুটিরশিল্পজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি আনতে পারে।
কুটির শিল্পের অতীত অবস্থা
বাংলাদেশের কুটিরশিল্প একদা সমগ্র পৃথিবীতে বিস্ময় সৃষ্টি করেছিল। সে সময়ে বাংলাদেশের গ্রামগুলােতে স্বর্গসুখ বিরাজ করতো। প্রতিটি গ্রাম ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষকেরা মাঠে প্রচুর ফসল ফলাতো। আর কারু শিল্পীরা ঘরে ঘরে উৎপাদন করত নানা ধরনের বিচিত্র রকমের কুটিরশিল্পজাত দ্রব্য। তাঁতিরা বুনত কাপড়-গামছা। কুমোরেরা তৈরি করত হাঁড়ি-কলসি প্রভৃতি। কামারেরা নির্মাণ করত নানারকম কাঠের জিনিস। কাঁসারিরা গড়ত থালা-গ্রাস ইত্যাদি । আর শাঁখারিরা তৈরি করত শখের জিনিস। বাংলার মসলিনের একদা সারা দুনিয়াজোড়া খ্যাতি ছিল। এগুলো চড়া মূল্যে বিদেশে রপ্তানি হতাে। রাজা-রানী প্রভৃতি উচ্চ শ্রেণীর লােকদের নিকট এর কদর ছিল অত্যাধিক। বাংলার মসলিনকে স্মরণ করেই কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেনঃ
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments