Header Ads






খরগোশ ও কচ্ছপের গল্প

খরগোশ ও কচ্ছপের গল্প


Snow
কদা এক খরগোশ একটি কচ্ছপের ধীর গতি নিয়ে হাসাহাসি করছিল।

কচ্ছপ এতে ক্রুদ্ধ হয় এবং খরগোশকে একটি দৌড় প্রতিযোগীতায় চ্যালেঞ্জ করে বসে। প্রথমে তাচ্ছিল্য করলেও একসময় খরগোশ দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে রাজী হয়। দৌড় শুরু হয়। খরগোশ খুব দ্রুত দৌড়াতে পারে। সে কিছুদূর গিয়ে একটা গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ে আলস্যে। সে ভাবে কচ্ছপ এত দূর আসতে আসতে সে একটা ঘুম দিয়ে ফেলতে পারে। এদিকে কচ্ছপ আসে। সে দেখতে পায় খরগোশ ঘুমিয়ে আছে। সে খরগোশকে রেখে দৌড়ে শেষ সীমানা ছুঁয়ে ফেলে। খরগোশ ঘুম থেকে উঠে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে দেখে কচ্ছপ বিচারক ময়ুরের কাছ থেকে বিজয়ীর মেডেল নিচ্ছে। বাংলা পাঠ্যবইয়ে এরকম একটা ছবি ছিল ময়ুর কচ্ছপের গলায় মেডেল পরিয়ে দিচ্ছে। যাইহোক, এই গল্প দিয়ে প্রধান যে নীতিশিক্ষাটা দেয়া হয় তা হলো, অধ্যাবসায়ে জিত হয়। এই গল্প থেকেই ইংরাজিতে প্রবাদের উদ্ভব হয়েছে স্লো এন্ড স্টেডি উইন্স দ্য রেইস। কিন্তু যেদিক থেকে দেখে এই প্রধান নীতিশিক্ষা নেয়া হয় সেদিক থেকে গল্পটির পুরা চিত্র দেখা যায় না। আংশিক চিত্র দেখা যায়। আর অর্ধ সত্য মিথ্যাই। ফলে একটি ভুল ও মিথ্যা শিক্ষা শিশুমনে গেঁড়ে বসে। প্রথমত, এই গল্পে অধ্যাবসায় কচ্ছপকে জেতায় নি। কচ্ছপের জেতার পিছনে অধ্যাবসায় যেমন কাজ করেছে তেমনি কাজ করেছে খরগোশের ঘুমিয়ে পড়া। কচ্ছপের জেতা = কচ্ছপের অধ্যাবসায় + ভাগ্য (খরগোশের ঘুমিয়ে পড়া) এই গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দলে দলে কচ্ছপেরা খরগোশদের সাথে কি দৌড়ে নেমেছিল বা নামবে? কখনোই না। কারণ ভাগ্যগুণে হয়ত একবার খরগোশ ঘুমিয়ে পড়েছিল। অন্য খরগোশেরা এই সুযোগ দিবে না। তখন গো হারা হারতে হবে। গল্পটির অর্ধচিত্র দেখিয়ে এই যে নীতিশিক্ষা দেয়া হয়, একে সাধারণ মনে করার কারণ নেই। এটি মানুষের সারভাইভরশীপ বায়াসকে শিশুকাল থেকেই শক্তিশালী করতে থাকে। সারভাইভরশীপ বায়াস হলো একটি যৌক্তিক ভ্রান্তি। আমরা সব সময় যে জিতে এসেছে তাকেই উদাহরণ দেই, তাকেই দেখতে পাই। কিন্তু চেষ্টা করতে গিয়ে, সব কিছু ঠিক ঠাক মত করেও ভাগ্যের সহায়তা না পাওয়ার জন্য যে আরো প্রচুর মানুষ হেরে গেছে তাদের কথা বিবেচনায় নেই না। সারভাইভরশীপ বায়াস আমাদের অতিরিক্ত আশাবাদের দিকে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত আশাবাদ ভালো নয়। পরবর্তীতে প্রাকৃতিক নিয়মে আমরা যখন ব্যর্থ হই, তখন আঘাত বেশী অনুভূত হয়। রোমান দার্শনিক মার্কাস তুলিয়াস সিসেরো একটি গল্পের কথা উল্লেখ করে গিয়েছিলেন তার লেখায়। ডায়গোরাস নামে একজন ওরাটর ছিলেন যিনি দেবতাদের বিষয়ে বিশ্বাস করতেন না। তাকে একবার কিছু ট্যাবলেটে আঁকা ছবি দেখিয়ে বলা হলো, দেখো এদের জাহাজ সমুদ্রে বিধ্বস্ত হয়েছিল, এরা প্রার্থনা করেছে, এরপর বেঁচে ফিরেছে। তখন ডায়গোরাস বলেছিলেন, “ঠিক আছে। এখন আমাকে তাদের ছবিগুলি দেখাও যারা প্রার্থনা করেছিল কিন্তু জাহাজডুবিতে সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে।” ডায়গোরাস যে জিনিসটি সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পেরেছিলেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ন। আধুনিককালে মোটিভেশন-অনুপ্রেরনা মূলক বই বক্তৃতা ইত্যাদির বড় বাণিজ্য, এগুলিতে একচেটিয়াভাবে সারভাইভরদের তুলে ধরা হয়। পত্রিকাগুলিও সারভাইভরদের তুলে ধরে। কিন্তু একই জাহাজডুবিতে প্রার্থনা করেও যারা তলিয়ে গিয়েছিল অর্থাৎ একই ধরনের কাজ ঠিকভাবে করেও দূর্ভাগ্যের কারণে যারা বিফল হয়েছিল সেইসব বিপুল মানুষের কথা আসে না। সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়া ব্যক্তি তথা ব্যর্থ ব্যক্তির আওয়াজ মিডিয়ায় যায় না। এবং তার গল্প দিয়ে অনুপ্রেরণা বানিজ্যও হয় না। খরগোশ ও কচ্ছপের গল্পটিতে কচ্ছপের জয়েও একটি সমস্যা আছে। সমস্যাটি খেলার নিয়মে সমস্যা নয় কিন্তু মানুষের চিরাচরিত নৈতিকতার বিচারে, একে অনৈতিকভাবেও দেখা যায়। মানুষের নৈতিকতা বললাম কারণ এই নীতিগল্পটি মানুষের জন্যই। কচ্ছপ খরগোশকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে তাকে জাগায় নি, বরং এর সুযোগ নিয়ে নিজে জিতে গেছে। গল্প থেকে আমরা শিক্ষা আমরা নিতে পারি খরগোশের দিক থেকে। যেমন, দায়িত্বজ্ঞানহীন আলস্য ভালো নয়। আলস্য বা অবহেলার কারণে আমরা হারতে পারি কচ্ছপের মত ধীর গতির প্রাণীর সাথেও। দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে চলবে না, আপনি যতই এক্সপার্ট হোন না কেন। এছাড়া আরেকটি শিক্ষাও আমরা নিতে পারি খরগোশের দিক থেকে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ন। এই গল্পে খরগোশের উচিত হয় নি কচ্ছপের সাথে দৌড়াতে যাওয়া। তার বুঝা উচিত ছিল সে যদি কচ্ছপকে হারায় তাহলে এটা কোন ঘটনা হবে না। কিন্তু কচ্ছপ যদি কোনক্রমে একবার তাকে হারিয়ে ফেলতে পারে, তাহলে এটি ইতিহাসে রয়ে যাবে। এমনটাই আসলে হয়েছে। খরগোশ আসলে এখানে বোকামি করেছে, নিজের চাইতে বহু অনগ্রসর কারো সাথে প্রতিযোগীতায়

গিয়ে।

No comments

Powered by Blogger.